রূপগঞ্জে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দেশের প্রথম সেনাপ্রধান, মুক্তিযুদ্ধের এস ফোর্স বাহিনীর অধিনায়ক ও ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) কে এম শফিউল্লাহ (বীর উত্তম) এর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় হাজারও মানুষের ঢল নামে সেখানে।সেনাবাহিনীর বিশেষ তত্ত্বাবধানে রোববার (২৬ জানুয়ারি) বাদ জোহর দুপুর সোয়া দুইটায় তার জন্মস্থান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কাজী আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গার্ড অব অনারের মধ্য দিয়ে এই জাতীয় বীরের প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।এ সময় সাবেক সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ'র জানাজায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দীপু, সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলামসহ মরহুমের একমাত্র ছেলে কাজী ওয়াকার আহমেদ, নিকট আত্মীয়স্বজন, এলাকাবাসী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা অংশ নেন।জানাজা শেষে মরহুম কে এম শফিউল্লাহ আত্মার শান্তি ও মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়।
কে এম শফিউল্লাহ'র একমাত্র ছেলে কাজী ওয়াকার আহমেদ সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমার বাবা দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন। নব্বই বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। গত দুই বছর ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। এরপর সিএমএইচে চিকিৎসা নেন। দুই তিন সপ্তাহ হাসপাতালে থাকতেন। একটু সুস্থ হলে আবার বাসায় চলে আসতেন। হাসপাতালে যাওয়া-আসা করে তিনি চিকিৎসা নিয়েছিলেন। তবে গত দুই মাস ধরে তিনি বেশি অসুস্থ ছিলেন। যে কারণে গত ২ জানুয়ারি রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি ভর্তি হন। টানা ২৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রোববার সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে সেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।’কে এম শফিউল্লাহ'র একমাত্র ছেলে কাজী ওয়াকার আহমেদ আরও বলেন, ‘সিএমএইচ কর্তৃপক্ষের প্রতি আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। তারা আমার বাবার চিকিৎসার ব্যাপারে যথেষ্ট করেছেন। উনারা জান-প্রাণ দিয়ে আমার বাবার দেখাশুনা করেছেন’।তিনি জানান, রোববার বাদ আছর ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে দ্বিতীয় জানানা শেষে রাজধানীর বনানী সামরিক কবরস্থানে মরহুমের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
সাবেক সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ ১৯৩৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইডেন ও ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।অবসর গ্রহণের পর সাবেক সেনাপ্রধান কে এম শফিউল্লাহ ১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগদানের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। পরের বছর ১৯৯৬ সালে নারায়ণগঞ্জ-১ আসন (রূপগঞ্জ) থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। কে এম শফিউল্লাহ তিন মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রীসহ বহু আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। এছাড়া রূপগঞ্জে তার বহু অবদানের কথা জানিয়েছেন এলাকাবাসী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও তার নিকট আত্মীয়-স্বজনরা।
জানাজা শেষে কে এম শফিউল্লাহ'র স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তার ভাতিজা রহমত উল্লাহ সময় সংবাদকে বলেন, ‘আমার চাচা খুবই নীতিবান, ন্যায়পরায়ণ ও সৎ মানুষ ছিলেন। দল মত সব কিছুর ঊর্ধ্বে ছিলেন। যে কোন দলের, যে কোন ধর্মের মানুষ তার কাছে এলে তিনি সবাইকে আপন করে নিতেন। উনি নিজের মতো চলতেন। কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতেন না। আমি আমার বাবার সঙ্গে যতোটুকু মিশেছি তার চেয়ে অনেক বেশি মিশেছি চাচার সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই তার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। রূপগঞ্জের প্রতি তার গভীর ভালোবাসা দেখেছি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু যখনই রূপগঞ্জের নাম শুনতেন তার মুখে হাসি ফুটে উঠত। তিনি খুব খুশি হতেন এবং অনেকটা,সুস্থ বোধ করতেন। রূপগঞ্জে তার অনেক অবদান রয়েছে। এগুলো বলে শেষ করা যাবে না। আমরা রূপগঞ্জের মানুষ তাকে নিয়ে গর্বিত ও তার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা একজন আদর্শবান, ধর্মপ্রাণ বিশাল ব্যক্তিত্বকে হারিয়েছে। সবার কাছে তার জন্য দোয়া চাই।’জানাজার পর কে এম শফিউল্লাহ সম্পর্কে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভুইয়া দীপু বলেন, ‘আমিও রূপগঞ্জের সন্তান। এখানে বড় হয়েছি এবং রাজনীতি করছি। তাকে কাছ থেকে দেখেছি। কে এম শফিউল্লাহ সাহেব বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অংশ। তিনি বাংলাদেশের প্রথম সেনাপ্রধান ও মুক্তিযুদ্ধের ৩ নম্বর সেক্টুরের কমান্ডার ছিলেন। রূপগঞ্জে স্কুল করেছেন, মসজিদ করেছেন। অনেক কিছু করেছেন। রূপগঞ্জের মানুষের জন্য আরও কিছু করার জন্য তিনি অনেক চেষ্টা করেছেন।’